Gariyahaat

A

এক অদৃশ্য জীবন চলতে থাকে নিজের তালে ।

গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে প্রায় ৭০টি পরিবার, প্রায় ১৮০জন মানুষ রাস্তায় থাকেন। এঁরা বহুবছর ধরে এখানে আছেন। উড়ালপুল তৈরী হওয়ারও ত্রিশচল্লিশ বছর আগে থেকে। শহরতলী,প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কিছু টাকা উপার্জ্জনের আশায় কলিকাতা মহানগরীতে এসেছিলেন। থাকার জায়গা নেই, তবু থেকে গেছেন। সরকার বদলায়, এঁদের জীবন নয়।এঁদের বেশীরভাগই কাগজ কুড়োন, নর্দমা পরিষ্কার করেন ; কিছু মানুষ চা কিংবা চাউমিনের দোকানে কাজ করেন। বাচ্চাগুলো ট্রাফিকে লাল আলো জ্বললে গাড়ির কাঁচ ঠুকে ধূপ বিক্রী করে। বুড়োবুড়িরা ফুটপাতের ধারে পা মুড়ে ভিক্ষা চান। যখন তখন পুলিশ কিংবা কর্পোরেশানের লোক এসে নির্বিচারে প্রহার চালায়, জিনিশপত্র তছনছ করে নষ্ট করে দেয়। বাচ্চাগুলো ভুল করে রাস্তায় খেললে পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি বেরিয়ে যায়।  ২০২০ সালের লকডাউন শুরু হলে বিদ্যালয়গুলিতে ঝাঁপি পড়ে যায়। অনলাইন শিক্ষার নামে প্রিভিলেজপ্রাপ্তদের শিক্ষাপ্রদান শুরু হয়। 

শিক্ষার অধিকার, মানুষের মৌলিক অধিকার। কেউ পড়বে,কেউ পড়বেনা ; তা চলবে না!

এই মূল ধারণা থেকেই সংহতি ইস্কুল শুরু হয়। উড়ালপুলের নীচে দাবার ঠেকে বসে আমরা দুইতিনজন গড়িয়াহাট সংহতি ইস্কুলের পরিকল্পনা বানাই। সামাজিক মাধ্যমে আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষাপ্রদানে উৎসাহী কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষ এগিয়ে আসেন। সকলে মিলে হৈহৈ রবে অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখ গড়িয়াহাট সংহতি ইস্কুলের প্রথম ক্লাস শুরু হয়। প্রতি রবিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা ইস্কুল চলে। রাস্তার উপর মাদুর পেতে গোল হয়ে বসে বাচ্চাদের দস্যিপনা আর মেধার স্ফূলিঙ্গের ছন্দেছন্দে নিমেষে সময় কেটে যায়। ইস্কুল মানে শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয় ; আঁকা গান গাওয়া বাজনা বাজানো – দুইঘন্টাব্যাপী এক উৎসব। এভাবেই চলছে সংহতি ইস্কুল। দাদাদিদিদের দেখলেই বাচ্চারা হুড়মুড় করে ছুটে আসে,”পড়াবেনা দাদা? পড়াবেনা দিদি?” কোনো একদিন কেউ না এলে মুখ ফুলিয়ে অভিমান দেখায়। কোনোদিন জুতো লুকিয়ে দেয় তো কোনোদিন নিজের ভাগের একটা লজেন্স খেতে দেয়। মা-বাবারা উনুনের আঁচ সামলাতে সামলাতে সব দেখে আর মুচকি হাসে। শ্রমজীবী লড়াকু মানুষদের এই একাত্মতাই তো সংহতি!

Leave a Message :

Want to make financial Contribution?

OR
For Automated Regular Contributions